ইউনিভার্সিটি চিয়ারলিডার্স

‘ক’ একটি ইউনিভার্সিটি, এখানে একটি মেয়ে নিজেকে একটু অশালীন ভাবে উপস্থাপন করলেই অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। সাধারণ ঘরের একটি মেয়ে তখন নিজেই নিজেকে অসাধারণ কিছু মনে করেতে থাকে। এই মেয়েদের প্রত্যেকের এ রঙিন জীবনটা শুরু হয় ভার্সিটির নানান ধরনের প্রোগ্রামের স্বেচ্ছাসেবকের (volunteer) দায়িত্ত পালনের মাধ্যমে।
এর পর আর তাদের পিছন ফিরে তাকাতে হয়না। কখনো তারা ভার্সিটি প্রোগ্রামের রেম্প মডেল, কখনো ফ্ল্যাশ মবের ডান্সার, কখনো টিচারদের দুপুরের খাবারের খণ্ডকালীন সঙ্গী, আবার কখনো তেতুলবাজ টিচারদের ‘পারসনাল’ শিক্ষাটুরের ভ্রমন সঙ্গী অথবা ‘বিশেষ প্রাইভেট পার্টির’ মোস্ট ওয়ান্টেড অথিতি। তাদের বিচরণ তখন ছেলেদের ক্রিকেট খেলার চিয়ারলিডার্স থেকে শুরু করে তেতুলজীবী টিচারদের রুম অবধি।

এই মেয়েদের চেহারাও আবার মনে রাখার মত! কারন, সুন্দর কে আপনি সুন্দর বলেই ক্ষান্ত হবেন কিন্তু অসুন্দর কেউ যদি সুন্দর হয়ে থাকতে না চেয়ে বরং নিজেকে মার্কেটের ডিসপ্লেতে সাজিয়ে রাখা একটা পণ্যের মত করে উপস্থাপন করতে চায় অথবা উপস্থাপন করার চেষ্টা করে তখন তার বাইরের অসুন্দর চেহারার সাথে সাথে ভিতরের রুচিহীনতাও ধরা পরে যায় আর তার এই আতলেমিপনাটা আপনি কখনোই ভুলতে পারবেন না।
রঙিন ভুবনের এই মেয়েদের অধিকাংশের শেষ পরিণতি একদম সাদাকালো। ভার্সিটির পড়ালেখা শেষ হয়ে আসে, সেই সাথে ফুরিয়ে আসতে থাকে এদের চাহিদাও। কারন দীর্ঘ চারটি বছর নিজেকে ডিসপ্লে করতে করতে চেহারাটা বুড়িয়ে যায় অল্পবয়সেই আর তাছাড়া ততদিনে ক্যাম্পাসে সমাগম হতে থাকে ‘কচি কচি’ নতুন আইটেমের, তখন এই নতুন আইটেম গুলি হয় তেতুলজীবীদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু।
তখন যেসব মেয়ে চালাক তাদের কেউ কেউ প্রতারিত হওয়ার আগেই তেতুলজীবীদেরকে ফাসিয়ে দেয়, নিজের সাথে সাথে তেতুলজীবীদেরকেও ক্যাম্পাস হতে বিতাড়িত করার ব্যবস্থা করে দিয়ে যায়। আর যেসব মেয়ে ‘অতি-চালাক’ তাদের কেউ কেউ তেতুলজীবীদের বাধ্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে।

আর বাকি মেয়ে গুলা যারা একটু ভালো পরিবার হতে এসে থাকে তাদের পরিবর্তনটা সবার চোখে ধরা পরে। তারা এই শেষ সময়ে এসে ক্লান্ত হয়ে পরে যার ফলে অনেকেই হিজাব-নিকাব পরা শুরু করে দেয়, কিন্তু তারা যে ধর্মীয় অথবা সামাজিক অনুশাসন মানতে এই লেবাস ধরেনি তা প্রকাশ পেয়ে যায় নতুন কোন এক কালচারাল প্রোগ্রামে কিংবা নতুন কোন তেতুলজীবীদের পাল্লায় পরলে।
এই লালনাদের এ ভাবে ‘নিজ হাতে’ গড়ে তুলার কারিগর কিছু তেতুলজীবী টিচারদের কথা না বলেলেই নয়, ধৈর্যের কোন বাঁধ এদের সীমানায় নেই। এদের চেতনা সব সময় রেডি থাকে, তাই সুযোগ পেলেই এরা ভার্সিটির রুমকে নিজের ব্যাডরুম বানিয়ে ফেলে।
এদের রুচি শূন্যের কুটায় হলে কি হবে এরা এদের আদর্শের ব্যাপারে অনেক খেয়ালী! যেমন, ক্লাসের কোন ভদ্র ছেলে এই তেতুলজীবীদের ফেবুতে ফ্রেন্ড রিকু পাঠালে জিন্দেগীতে একছেপ্ট করবেনা, কিন্তু খুঁজে খুঁজে নিজে থেকেই রিকু পাঠাবে ক্লাসের সুন্দরী ছাত্রীটিকে।

এই কথা গুলি বললাম যে কারনে সেটা এখন বলছি,
“এতো এতো সুযোগ থাকার পর এবং নিজে ওসব মেয়েদের চেয়ে অনেক গুন বেশি সুন্দরী ও মেধাবী হওয়ার পরও যে সব মেয়েরা নিজেকে সবসময় তেতুলজীবীদের ধরাছুয়ার বাইরে রাখে, খুলা বাজারের পণ্য হিসেবে নয় বরং নিজের শরীর কে একটি ‘মেয়ের শরীর’ বলে উপলব্ধি করে, সামান্য উপকার পাওয়ার আশায় অথবা ‘পরে উপকারে আসতে পারে’ এই আশায় তেতুলজীবী বন্ধু/টিচারদেরকে নিজের নারীত্বের মর্যাদাহানীকর কোন ব্যাপারে ছাড় দেয়না; ঠিক এই সব মেয়েদের জন্যেই রয়েছে ভালোমানুষদের ভালবাসা, আর এদের জন্যেই হয়ত পৃথিবীটা এখনো সুন্দর।”

(বিঃদ্রঃ উপরের লেখাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক, লেখাটি কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিগত ভাবে কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে সেটা সম্পূর্ণ কাকতালীয়, এবং এর জন্য লেখক সম্পূর্ণ ভাবে দায়মুক্ত।)

Status

আইইউবিএটি (IUBAT) বনাম ধর্মীয় পোশাক

IUBAT-এর সাথে যুক্ত অনেককেই দেখি অনেক রকমের পোষ্ট দিতে, ধর্মের কোন পোশাক নেই… পোশাক পড়ে ধার্মিক হওয়া যায়না… পাঞ্জাবী-বোরকা ভিনদেশী কালচার… পোশাক কালচারের ধর্ম মনের… বোরকা ছাড়া কি পর্দা হয়না… ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কথা।
আরে ভাই, শুধু বোরকা অথবা লম্বা কাপড় কেন, লোহার তৈরি কোন মেটালিক জিনিস দিয়ে যদি কেউ মাথার চুল ঢাকে, সেটাও পর্দা।
যুক্তির খাতিরে যুক্তি দিলেই হয়না। কারন যুক্তি সব সময় অধিকারের কথা বলেনা, অনেক সময় যুক্তি দিয়ে মানুষের অধিকার হরন করা হয়।

আমরা বৃত্তের ভিতরে থেকে শুধু বৃত্তের জ্যা, ব্যাস, ব্যাসার্ধ ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা না করে যদি বৃত্তের বাইরে এসে বৃত্ত কিসের উপর অবস্থিত এবং বৃত্তটার প্রয়োজনীয়তা কি এসব নিয়েও চিন্তা করি তাহলেই কেবল বৃত্তের সমস্যা সঠিক ভাবে সমাধান করতে পারব। IUBAT কর্তৃপক্ষ পাঞ্জাবী-বোরকাকে ভিনদেশী কালচার বলে আসল সমস্যার কথা বারবার এড়িয়ে যায় তাই এই কথা বললাম, কারন কালচার হচ্ছে বৃত্তের ভিরতের অংশ।
ইডওয়ার্ড বার্নেট টেলর এর মতে কালচার হচ্ছে “That complex whole which includes knowledge, belief, art, morals, law, custom and any other capabilities and habits acquired by man as a member of society.”
এখন Knowledge, Belief, Art, Morals, Law ইত্যাদি যদি একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপেক্ষীত হয় তাহলে সে প্রতিষ্ঠানকে Ignorant তৈরির কারখানা বলা যেতে পারে।
অনেকেই বলবে – IUBAT তে কালচার কে উপেক্ষা করা হয়না।
হুম, সেটা ঠিক। উপেক্ষা করলে কি আর রাতে জমে উঠা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রঙ্গিন আলোর ছন্দে কোমর দুলিয়ে কোন যুবতী ‘শিলা কি যাওয়ানি…’ গানের সাথে পারফর্ম করতে পারত? পারত না।
হিন্দি গান, রেম্প, মিনি স্কারট ইত্যাদি ইত্যাদি হচ্ছে IUBAT কালচার। Knowledge, Belief, Art, Morals, Law গুলো সব গোল্লাই যাক।
কই কোন স্যার কে তো কোনদিন দেখিনি এসব বিতর্কিত বিষয় নিয়ে পোষ্ট দিতে।

১৩০৩ সালে হজরত শাহ্‌ জালালের আগমন, আর ইংরেজদের আগমন ১৭৫৭ সালে। আপনার কথা মতে পাঞ্জাবী-বোরকা যদি শুধুই কালচারাল পোশাক হয় তাহলে শাহ্‌ জালালের নিয়ে আসা পোশাক আমাদের জন্য কালচারাল না হয়ে ইংরেজদের পোশাক কি করে কালচারাল হয়? ১৩০৩ সাল থেকে পড়ে আসা পোশাক ফরমাল না হয়ে ১৭৫৭-র পোশাক কি করে ফরমাল হয়? পাঞ্জাবী-বোরকা ভিনদেশীদের পোশাক হলে মিনি স্কারট কি করে দেশি পোশাক হয়?

এবার একটু বৃত্তের বাইরে আসি।
মুসলিমরা আজ এইডেন্টিটি ক্রাইছে-এ ভোগার সব চেয়ে বড় কারন গুলির একটি হল ইসলাম কে শুধু মাত্র একটি ধর্ম মনে করা, অপরটি হল ভিন দেশি, ভিন জাতিদের অনুকরন করা।
ইসলাম শুধু মাত্র একটি ধর্ম নয়। ইসলাম একটি রাজনীতি, একটি কালচার, একটি সংবিধান, সর্বপুরি একটি জীবন ব্যবস্থা।

আজ IUBAT এর মাঠে যে বাংলাদেশি পতাকা পতপত করে উড়ছে ওটাও কিন্তু এই ইসলামেরই অবদান। আর এটা বুঝার জন্যই বৃত্তের বাইরে আসতে হবে। IUBAT তে যদি ৯৫% মুসলিম ছাত্র না পড়ে হিন্দু ছাত্র পড়ত তাহলে আজ ওখানে ভারতীয় পতাকা উড়ত। কারন ১৯৪৭ সালে দেশটা ভাগ হয়েছিল কিন্তু এই ধর্মের ভিত্তিতেই।
আর এটাই হচ্ছে ইসলামের অন্যতম রাজনৈতিক রূপ। আর পাঞ্জাবী হচ্ছে ইসলামী কালচার, ভিনদেশি কোন কালচার নয়। যেমনটি ধূতি হচ্ছে হিন্দু কালচার, ভারতীয় কালচার নয়।
মসজিদের উপর গোল করে যে গম্বুজ দেওয়া হয়, ওটাও কিন্তু ধর্মীয় কোন আদেশে নয়, ওটা স্রেফ একটি কালচার, ইসলামী কালচার। এখন যেহেতু গম্বুজ-মিনার দেওয়া না দেওয়াতে ধর্মের কিছু আসে যায় না সেহেতু আপনি এসবের পরিবর্তে গির্জার মত করে কোন একটি Transept বসিয়ে দিলেন। এবার ভেবে দেখন ব্যাপারটা কেমন লাগছে।

আর বাংলাদেশের প্রতিটি পাঞ্জাবী-বোরকা পরিহিতা মুসলিম দের জিজ্ঞাস করে দেখুন, এমন কাউকেই পাবেন না যে বলবে উনি আরবদের কালচারাল ফলো করার জন্য এ পোশাক পরেছেন। যে ধর্ম সামগ্র ভারত জুড়ে শতশত বছর ধরে সংস্কৃতি শিক্ষা দিয়ে গেলো তার সংস্কৃতি আমাদের ভালো লাগেনা, কিন্তু তাদের হটিয়ে যে ইংরেজ ২০০ বছর ধরে শুধু নিপীড়ন, লুটপাট আর ধ্বংসের খেলা খেলে গেলো তাদের সংস্কৃতি আজ আমার বড় আপন হয়ে গেলো।

অনেক কথায় মনে আসে কিন্তু সব লিখে প্রকাশ করতে গেলে সময় কুলাবেনা। তবে ভার্সিটির পর্যায়ের একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঞ্জাবী-বোরকা নিয়ে আন্দোলন হওয়াটা অনেক দুঃখ জনক। খাজনার চেয়ে বাজনা যখন একটু বেশি হয় তখনই ব্যালেন্সের ঘারতি হয়। আর পাঞ্জাবী-বোরকা পরিহিতারাও এখনকার এমন কঠোর আন্দোলনে নামত না যদি ভার্সিটি অসাড় এক ড্রেস কোডের ফাঁদে তাদের উস্কে না দিত। এখানে ড্রেস কোড সবার জন্য নির্দিষ্ট না, উল্টাপাল্টা অনেক পোশাক পড়ে অনেকেই আসে তখন তাদের গেইটে ফিল্টার করা হয়না বরং স্বাগতম জানানো হয়, সমস্যাটা তখনই হয় যখন কেউ পাঞ্জাবী পড়ে আসে।

মনে রাখতে হবে- ক্ষুধার্তের ক্ষুধা তখনই দ্বিগুন বেড়ে যায় যখন পাশে বসে থাকা অপর ক্ষুধার্তকে কেউ মোরগ-পোলাও দিয়ে যায়।